ইলাষ্ট্রেশনের জন্য ইলাষ্ট্রেটর, উত্তরটা সহজ। কিন্তু এতে প্রশ্নের উত্তর নেই। এরপরই প্রশ্ন আসে ইলাষ্ট্রেশন কি ?
ইলাষ্ট্রেশন
আপনি বহু দেখেছেন। পাঠ্য বইতে জ্যামিতিক ড্রইং থেকে শুরু করে যন্ত্রপাতির
ছবি, বইপত্রে নানারকম ড্রইং, বিভিন্ন যন্ত্রের ম্যানুয়েলে বিভিন্ন অংশের
পরিচিতি বুঝানোর ছবি। যেগুলি দেখে মনে হয় কলম বা পেনসিল ব্যবহার করে হাতে
আকা।
এত
সাদামাটা বর্ননা প্রয়োজন নেই, আপনি অবশ্যই এরচেয়ে ভাল বোঝেন। রেখা দিয়ে
যাকিছু আকা হয় সেগুলি ইলাষ্ট্রেশন। তাইবলে শুধুমাত্র রেখা থাকবে এমন কথাও
নেই, অনায়াসে রং থাকতে পারে। ইলাষ্ট্রেটরে করা অনেক ড্রইং দেখে বোঝা কঠিন
সেটা রেখা এবং রং দিয়ে করা। বরং আরেক জনপ্রিয় এবং বেশি পরিচিত ফটোশপের সাথে
তুলনা করে দেখা যাক।
ফটোশপে
আপনি ছবি আকতে পারেন রংতুলি দিয়ে যেভাবে আকেন সেভাবেই। বিভিন্ন রঙের
মিশ্রনে নতুন রঙ সৃষ্টি করতে পারেন। আবার ক্যামেরা দিয়ে উঠানো বা স্ক্যান
করা ছবিও ব্যবহার করতে পারেন। ফলে ফটোগ্রাফিক একটি বিষয় থাকে। বহু রঙের
বিষয় নিয়ে যে সৌন্দর্য সেটা ইলাষ্ট্রেটরে নেই। বরং এখানে রয়েছে নিখুত মাপের
বিষয়। সেইসাথে ড্রইং বিষয়ক সৌন্দর্য।
ফটোশপের
সাথে ইলাষ্ট্রেটরের মুল পার্থক্য কাজের পদ্ধতিতে। ফটোশপে ছবি তৈরী হয়
পিক্সেল বা ডট দিয়ে (বিটম্যাপ)। কোন ইমেজে কতগুলি ডট সেটা নির্দিষ্ট। খুব
বড় করে দেখলে ডটগুলি দেখা যায়। যে কারনে ছোট ইমেজকে বড় করলে মান নষ্ট হয়।
ইলাষ্ট্রেটরে ছবি তৈরী হয় গানিতিক হিসেবে (ভেক্টর)। যত বড়ই করুন, সবসময় মান
একই থাকবে। ইলাষ্ট্রেটরে তৈরী ফাইলের সাইজ ফটোশপের ফাইলসাইজ থেকে অনেক
ছোট। এই বিষয়গুলি একসাথে করে কিছু কাজে ইলাষ্ট্রেটর অনন্য।
কাজের দিকগুলি দেখা যাক।
ডিজাইন এবং প্রিন্ট
: যারা নেমকার্ড থেকে শুরু করে লিফলেট-পত্রপত্রিকা তৈরী করেন তাদের অন্তত
টেক্সট এর জন্য ইলাষ্ট্রেটর প্রয়োজন। কারন ফটোশপে ফটোগ্রাফিক ইমেজ ঠিকভাবে
পাওয়া যায় ঠিকই, লেখাগুলিকে খুব ধারালো পাওয়া যায় না। ফলে ইমেজ ফটোশপে,
তারপর তাকে ইলাষ্ট্রেটরে এনে টেক্সট এবং ড্রইং যোগ করা এটাই নিয়ম হয়ে
দাড়িয়েছে। এছাড়া লোগোর মত বিষয় সবসময়ই করা হয় ইলাষ্ট্রেটরে। লোগো কখনো বড়
কখনো ছোট করে প্রিন্ট করা প্রয়োজন হয়। ইলাষ্ট্রেটরে বগ-ছোট করলেও সবসময়ই
মান একই থাকে।
এনিমেশন এবং ভিডিও
: যারা এনিমেশন করেন তাদের অনেক সময়ই মুল ড্রইং তৈরী করে তার ভিত্তিতে কাজ
করতে হয়। টুডি এনিমেশন তো বটেই, থ্রিডি এনিমেশনের ক্ষেত্রেও। থ্রিডি
ষ্টুডিও ম্যাক্সে বাড়ি তৈরীর জন্য অনেকে প্রথমে ইলাষ্ট্রেটরে ড্রইং করে নেন
(কেউ কেউ কোরেল ড্র এবং অটোক্যাড ব্যবহার করেন), এরপর তাকে ম্যাক্সে নিয়ে
এক্সট্রুড সহ অন্যান্য পদ্ধতিতে থ্রিডি বাড়ি তৈরী করেন। টুডি এনিমেশন
যেহেতু ড্রইং ভিত্তিক সেহেতু পুরো ড্রইং ইলাষ্ট্রেটরে করে এনিমেশন
সফটঅয়্যারে সরাসরি ব্যবহার করা যায়। যে কারনে সব এনিমেশন সফটঅয়্যারে
ইলাষ্ট্রেটর ফাইল ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়েছে। আর আফটার ইফেক্টর এর মত
এনিমেশন সফটঅয়্যার ব্যবহার করে যদি চলমান আলোকরেখা দেখাতে চান, সেটাও করা
হয় ইলাষ্ট্রেটর ড্রইংকে পাথ হিসেবে ব্যবহার করে তার ওপর ইফেক্ট যোগ করে।
টেকনিক্যাল ড্রইং
: বাড়ির নকসা, গাড়ির ডিজাইন থেকে শুরু করে যে কোন যন্ত্রপাতির ডিজাইন করা
হয় ইলাষ্ট্রেটরের মত সফটঅয়্যার ব্যবহার করে। এতে একেবারে নিখুত মাপ ব্যবহার
করা যায়। ফলে সেই ডিজাইন ব্যবহার করা যায় যন্ত্রপাতির পরিচিতিতে।
ইন্টেরিয়র বা এক্সটেরিয়র ডিজাইনে সঠিক মাপ, অবস্থান ইত্যাদি বুঝোনোর জন্য
ইলাষ্ট্রেটরে ড্রইং করা হয়।
ওয়েব ডিজাইন
: ফ্লাশভিত্তিক ওয়েবডিজাইন করতে চান? ইলাষ্ট্রেটরে মনের মত ডিজাইন করে
নিন। এরপর ফ্লাশ ক্যাটালিষ্টে ডকুমেন্টটি নিয়ে তাকে ইন্টারএকটিভ ওয়েবপেজ
বানিয়ে ফেলুন। এনিমেশন-ভিডিও যোগ করুন। এক লাইন কোডও লেখা প্রয়োজন হবে না।
প্রশ্ন থাকতে পারে এসব কাজের জন্য ইলাষ্ট্রেটর ব্যবহার করতেই হবে?
আপনি
ফটোশপের বদলে অন্য সফটঅয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। ইলাষ্ট্রেটরের বদলেও
অন্য সফটঅয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। অন্তত কোরেল ড্র অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে
ইলাষ্ট্রেটর অথবা কোরেল ড্র যে কোন একটি। একই কাজের জন্য দুটি সফটঅয়্যার
প্রয়োজন নেই।
ইমেজ
এডিটিং এর জন্য যেহেতু ফটোশপ অতুলনীয় সেকারনে একই কোম্পানীর তৈরী, সহজে
একসাথে ব্যবহারযোগ্য ইলাষ্ট্রেটর কিছুটা প্রাধান্য পেতেই পারে।
0 মন্তব্য(সমূহ):
Post a Comment